বর্ষার আগেই অঝোর বৃষ্টিতে প্লাবিত রংপুরের নিম্নাঞ্চল
রংপুরের নিম্নাঞ্চলে বর্ষার আগেই অঝোরে বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে। এই অঞ্চলে রংপুর মহানগরী সহ অনেক স্থানে বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় রংপুরে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কারণে এই অতি ইতার দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতির ফলে জমির ধান, বাদাম সহ রবিশস্য পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে এবং কৃষকরা চরম চিন্তায় পড়েছে।
কৃষি অফিস বলছে, ফসল নিমজ্জিত হলেও ক্ষতির শঙ্কা কম। খুব দ্রুত পানি নেমে যাবে। অপরদিকে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে এবং এ নিয়ে তিস্তাপাড়ের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সোমবার (১৯ মে) সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টিতে নগরীর জুম্মাপাড়া, কামারপাড়া, মুন্সিপাড়া, হনুমানতলা, খাসবাগ, নাছনিয়া, বড়বাড়ি, হাবিব নগর আকালিটারি, চকবাজার, ঈদগাওপাড়া, ঘাঘটপাড়, তামপাট, বনগ্রাম সহ বেশ কয়েকটি পাড়া-মহল্লায় পানি উঠেছে। বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি উঠায় এবং শিক্ষার্থীরা বিপাকে রয়েছে।
জানা গেছে, রংপুর নগরীর শ্যামা সুন্দরী খাল খনন না করায় অবিরাম বৃষ্টিতে খাল উপচে পানি আশপাশের অনেক বাড়ি-ঘর ও অলিগলিতে প্রবেশ করেছে। নগরীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই শ্যামা সুন্দরী খালের অনেক স্থান তলিয়ে যাওয়ার ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুটি মুন্সিপাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ও ছাওলা ইউনিয়ন, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর, শহীদবাগ, হারাগাছ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা, গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী, মর্ণেয়া, কোলকোন্দ, আলমবিদিতর সহ জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এলাকায় পানি উঠেছে। একই চিত্র রংপুরের লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে প্রাথমিক হিসেবে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৩শ হেক্টরের বেশি জমির ধান, বাদাম, পাট, মরিচ সহ রবিশস্য নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া শাক-সবজির ক্ষতিও হয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ২৪ ঘণ্টার বেশি পানি জমে থাকলে সমস্যা হবে। তাই জমির পানি বের করে দেওয়া জরুরি। রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তফিজার রহমান জানান, রংপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের আবহাওয়া আরও কয়েকদিন থাকতে পারে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অসময়ে তিস্তা ফুলে ফেঁপে উঠছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫১ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। একই সময়ে কাউনিয়া পয়েন্টে ২৮ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার ছিল। সকাল ৯টায় পানির প্রবাহ বেড়ে ২৮ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।